⟪ প্রতিবাদ ⟫ | «Magazine» | «Home» | «Map&Rev» |
১৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার। বনশ্রীর ব্র্যাক নবধারা স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাসায় ফেরে তাদের শিক্ষার অনিশ্চয়তা আর শেখার আনন্দ-অবসানের ফরমান হাতে করে। ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করেই জানান দিয়েছে, তারা নবধারা স্কুল দুটি চালাবে না। উত্তরার নবধারা স্কুলের শিক্ষার্থীদের হাতে চিঠি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে দুদিন পর।
বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের দুটি প্রাক্-প্রাথমিক, প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; শিক্ষা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের লোকজন নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের; নির্ভার শিক্ষা, শেখার আনন্দে শিক্ষা; মুখস্থ করার প্রয়োজন নেই; হাতের কাজ, বুদ্ধির কাজ; শ্রেণিকক্ষের কোণে বইয়ের তাক, ক্লাসের ফাঁকে বাইরের বই পড়া। জাতীয় শিক্ষাক্রম মেনে আলাদা বাংলা বই, ইংরেজি বই, অঙ্ক বই, বিজ্ঞান বই; রংচঙে বই; বিশেষজ্ঞদের লেখা এমনভাবে যেন পড়ালেখার জটিল বিষয়গুলো বাচ্চাদের বুঝতে অসুবিধা না হয়।
২০১৪-তে চালু স্কুল দুটি — উত্তরায় জানুয়ারিতে আর বনশ্রীতে ফেব্রুয়ারিতে। অভিভাবকদের বলা হয়েছিল, চিন্তা বা দুশ্চিন্তা না করতে, কারণ, বছর গড়িয়ে বাড়তে বাড়তে পড়ালেখা কলেজ অবধি গড়াবে। তারপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে পা; ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় তো আছেই।
ছেলেমেয়েদের পড়ার আনন্দ; মা-বাবা, অভিভাবকের অতল তৃপ্তি — খেলবার মাঠ না থাকুক, বসে পড়ার সবুজ ঘাস না থাকুক, ছায়ায় বসার গাছ না থাকুক; শেখার নির্ভার আনন্দটুকু আছে, শিক্ষক-শিক্ষিকার আন্তরিকতা আছে, ঐকান্তিকতা আছে। এই ঢের। এতটুকুই বা কোথায় মেলে?
সব আনন্দ মাটি, একটি চিঠিতে। আড়াই বছর, এক বছর বা ছয় মাসের আনন্দের শেষ ২০১৬-এর মাঝ জুলাইয়ে, ভরা বর্ষার পানি আর আনন্দের নেই, কেবলই কান্নার। ব্যথা-ম্লান মুখে একটি জিজ্ঞাসা, সব বাচ্চার: এখন কোথায় যাব? মা-বাবার মুখে উত্তর নেই। মাঝ বছরে তো কোথাও যাওয়া যায় না। চলতি বছর শেষ করে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যদিও কেউ, এমনকি শিক্ষক-শিক্ষিকারও, চাইলে চলে যেতে পারে এখনই। ভর্তির সময়ে দেওয়া টাকা ফেরত পাবে; বাকি সময়ের সেশন ফি আনুপাতিক হারে ফেরত পাবে। শেখার আনন্দ যা হারিয়েছে বা হারাবে, তা ফেরত পাবে তো? যে শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দেবে বছর শেষে, যে শিক্ষার্থী নিম্ন-মাধ্যমিক বৃত্তি পরীক্ষা দেবে তাদের কী হবে?
চলতি বছরে থেকে গেলেও কি সব আগের মতো চলবে? সমান উদ্দীপনার সঙ্গে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে তো? যে শিক্ষার্থী বছর ঘুরে নবম শ্রেণিতে উঠবে, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য তৈরি হবে, সে নতুন বছরে কোথায় ভর্তি হবে? ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে কেন? শিক্ষার সঙ্গে ব্যবসায় কিঞ্চিৎ জড়িত, কিন্তু ব্যবসায় তো নয়। এ প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে জড়িত ৮১১ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন উত্তরা শাখায় ৪২৫ আর বনশ্রী শাখায় ৩৮৬। আড়াই বছরের হিসেবে সংখ্যাটা অনেক। সঙ্গে আছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা আর অফুরন্ত ভালোবাসা। তাদের কষ্ট-স্বীকার। সে কষ্টে গড়া স্বপ্নের ভেঙে পড়ার শব্দ আজ কেবলই ফিরে ফিরে আসে, অমোঘ ব্যবসায়িক বোধ-বুদ্ধির কাছে হার মেনে।
ব্র্যাকের চিঠিতে বলা হয়েছে, স্কুল দুটি পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে চালু করা হয় একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত। আড়াই বছরে কোনো অভিভাবক কথাটা জানল না কেন? কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকাও এ কথাটা শোনেনি কখনো। এ তো অভিভাবকদের বিশ্বাস ভাঙার শামিল, আর শিক্ষার্থীদের মন ভাঙার খেলা। গেল আড়াই বছর ধরে যে শিশুদের ব্যতিক্রমী ধারায় শিক্ষা দেওয়া হলো তারপর গতানুগতিক অন্য কোনো স্কুলে গিয়ে তারা মানিয়ে নিতে পারবে তো? না পারারই কথা, তবে পারতে তো হবেই! কিন্তু এই ব্যর্থতা, না-পারার কষ্ট, বেদনার দায় কার? শিক্ষার্থীদের হাতে চিঠি ধরিয়ে দিয়ে যারা কাজ শেষ বলে মনে করে, তাদের নিশ্চয়ই নয়। চিঠিতে তারই আভাস।
আবু জার মোঃ আককাস। (২১শে জুলাই ২০১৬)। ব্র্যাকের স্কুল বন্ধ, শিক্ষার্থীরা যাবে কোথায়? এনটিভি অনলাইন (http://www.ntvbd.com/opinion/64071/. Accessed 21 July 2016)
Rev.: vii·xi·mmxxii