⟪ অনুবাদ ⟫ | «Magazine» | «Home» | «Map&Rev» |
বালতিটা হলিহকের গাছগুলোর পাশে রেখে, কুলগাছের নিচের ছোট বাঁশগাছটা থেকে কিছু পাতা তুলল আকিকো। তারপর সেগুলোকে ছেড়ে দিল বালতির ভেতর।
বলল, “নৌকা। এগুলো তোমার পছন্দ?”
ছেলেটি গভীরভাবে তাকাল বালতির ভেতর। এরপরে আকিকোর দিকে তাকিয়ে একটু হাসল।
ছেলেটির মা বলল, “আকিকো তোমার জন্য এই সুন্দর নৌকাগুলো বানিয়েছে; তুমি খুব লক্ষ্মী ছেলে। আর তুমি লক্ষ্মী হয়ে থাকলে, আকিকো তোমার সাথে খেলবে।”
ছেলেটি আকিকোর দয়িতের ভাই। মা তার বাবার সঙ্গে একাকী হতে চায় বুঝেই আকিকো বাইরে বাগানে এসে দাঁড়িয়েছিল।
ছেলেটিকেও নিয়ে এসেছিল সঙ্গে, কারণ সে তাদের বিরক্ত করছিল। এই ছেলেটি তার দয়িতের সবচেয়ে ছোট ভাই। সে পাতাগুলো নাড়িয়ে দিয়ে বলল, “এরা একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছে।” এতে সে খুব খুশি হয়ে উঠল।
আকিকো ধোয়া কিমোনোর পানি নিঙড়ে ফেলে তা রোদে শুকোতে দিল।
যুদ্ধ শেষ; কিন্তু তার দয়িত এখনও ফেরে নি।
বালতির পানিকে আরো জোরে নাড়িয়ে দিয়ে ছেলেটি বলল, “ধাক্কা লাগুক। আরো জোরে।”
“তুমি তোমার সারা গায়ে পানি ছিটাচ্ছো।”
“কিন্তু তা নাহলে নৌকাগুলো নড়ছে না যে।”
কথাটা সত্যি যে সে হাত সরিয়ে নেওয়া মাত্র নৌকাগুলো আর নড়ছিল না।
“চল, আমরা এগুলো নদীতে নিয়ে যাই: তাহলেই ওরা চলতে থাকবে।”
ছেলেটি পাতাগুলো হাতে নিল। আর আকিকো বালতির পানি হলিহকের গাছগুলোয় ঢেলে দিয়ে, বালতিটি রান্নঘরে রেখে এল।
আকিকো নদীর মাঝে উঁচু একটা পাথরের উপর দাঁড়িয়ে পাতাগুলোকে একে একে ছেড়ে দিল।
ছেলেটা আনন্দে হাততালি দিয়ে বলল, “দেখ, দেখ, আমারটা জিতেছে।”
সে নদীর ধার দিয়ে দৌঁড়ে গেল যেন প্রথম হওয়া নৌকাটি হারিয়ে না ফেলে।
আকিকো বাকি পাতাগুলো ছুঁড়ে দিয়ে, ছেলেটির পেছনে দৌঁড়ুতে লাগল।
আকিকো বেশ সতর্ক যেন তার বাম পা মাটি স্পর্শ করে। সে ছোটবেলায় পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়েছিল; ফলে তা বাঁ পায়ের গোড়ালি মাটি স্পর্শ করত না। তার পা’টি সরু আর নরম, পাতার ওপরের দিকে খানিকটা উঁচু। তার ইচ্ছে ছিল না বিয়ে করে; এর পরেও বাগদান হয়ে গেল। এটা নিশ্চিত যে, মানসিক শক্তি শারীরিক ত্রুটিকে অতিক্রম করতে পারে; তাই সে প্রচণ্ড চেষ্টা করেছিল, আগের চেয়ে বেশি ক’রে, তার বাঁ পায়ের গোড়ালি দিয়ে মাটিতে হাঁটতে। সহজেই তার পায়ে ফোস্কা পড়ে গেল, কিন্তু সেও তার জেড় ধরে থাকল। তারপর এল পরাজয় এবং সে এ কাজটা করা ছেড়ে দিল। তার পায়ের সেই ফোস্কার দাগ এখনও আছে, ঠিক পাদস্ফোটের মত।
বহুদিন পর আবার সে তার বাঁ পায়ের গোড়ালি দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছিল; কারণ, সেই ছোট ছেলেটি তার দয়িতের ভাই।
এই আগাছায় ভরা ছোট নদীতে দু’তিনটি নৌকা আগাছায় আটকাল। তার প্রায় দশ কদম সামনে ছেলেটি নৌকাগুলো ছাড়িয়ে নিচ্ছিল; মনে হল, পিছনে আকিকোকে সে লক্ষ্যই করছে না। আকিকো কিভাবে হাঁটছে এটা সে লক্ষ্য করল না।
তার ঘাড়ের পিছনের ছোট গর্তটা দেখে আকিকোর মনে পড়ে গেল তার দয়িতের কথা। তার ইচ্ছে হল ছেলেটিকে সে তার বাহুতে আবদ্ধ করে।
মা বেরিয়ে এল, বিদায় জানালো; আকিকো এবং ছেলেটিকে নিয়ে এগিয়ে চলল।
“আসি,” বলল ছেলেটি ধীরে ধীরে।
হয় তার দয়িত মারা গেছে কিংবা তার বাগদান ভেঙে গেছে। হয়ত যুদ্ধের মানসিকতাই তাকে আকিকোর মত এক খোঁড়া মেয়েকে বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
সে আর বাড়িতে গেল না। বরং পাশেই যে বাড়িটি তৈরি হচ্ছে তাই সে দেখতে গেল। আশেপাশের সব বাড়ির মধ্যে এইটিই সবচেয়ে বড়। এবং সবাই দেখছিল এ বাড়িটা। যুদ্ধের সময়ে এর নির্মাণ বন্ধ হয়ে পড়েছিল; এখন এর ওপরে এবং চারপাশে জন্মেছে আগাছা। আর হঠাৎ করেই যেন এর কাজ আবার শুরু হয়েছে। বাড়ির দরজার সামনে বিশাল দু’টি পাইন গাছ দাঁড়িয়ে।
আকিকোর মনে হলো এটা যেন একটা নির্মম অনমনীয় গোছের বাড়ি। কিন্তু এটার অনেকগুলো জানালা আছে। বৈঠকখানাটা মনে হল যেন পুরোটাই কাঁচে ঘেরা।
সবাই ভাবছিল এখানে কারা থাকবে। কিন্তু কেউই এটা নিশ্চিতভাবে জানত না।
আবু জার মোঃ আককাস। (জুলাই ১৯৯২)। ‘বাঁশপাতা’, চোখ, পথিকৃতি প্রকাশনী, ঢাকা। পৃ ৭৯–৮০
কাওয়াবাতা ইয়াসুনারির সামাবুনে (笹舟, The Bamboo Leaves) নামের গল্পের ইংরাজি থেকে অনুদিত।
Rev.: vii·xi·mmxxii